পিরিয়ড বা মাসিক হলো প্রজননক্ষম নারীদের দেহে প্রতি মাসে ঘটা একটি শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া। প্রতিমাসে মেয়েদের যোনিপথ দিয়ে যে রক্তস্রাব হয় তাকে ঋতুস্রাব বা মাসিক বা পিরিয়ড বলে। প্রতিমাসে একবার হয়ে থাকে, ৩ থেকে ৭ দিন পর্যন্ত রক্তস্রাব সাধারণত হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে কম বেশি হতে পারে। প্রথম ২-৩ দিন কিছুটা বেশী রক্তস্রাব হয় এবং পরবর্তীতে দিনগুলিতে কম রক্তস্রাব হয়ে থাকে
• ডিম্বস্ফোটন ও গর্ভধারণের জন্য প্রস্তুতি: প্রতি মাসে, জরায়ুর আস্তরণ ডিম্বাণুর জন্য প্রস্তুত হয়। যদি ডিম্বাণু সার না হয়, তাহলে এই আস্তরণটি শরীর থেকে বেরিয়ে যায়, যার ফলে রক্তপাত হয়।
• হরমোনের ভারসাম্য: এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন নামক হরমোন মাসিক চক্র নিয়ন্ত্রণ করে। ডিম্বাশয়ে ডিম্বাণু উৎপন্ন হলে, এই হরমোনের মাত্রা বৃদ্ধি পায় এবং জরায়ুর আস্তরণ ঘন হয়। যদি ডিম্বাণু সার না হয়, তাহলে হরমোনের মাত্রা কমে যায় এবং জরায়ুর আস্তরণ ভেঙে যায়, যার ফলে রক্তপাত হয়।
পিরিয়ডের কিছু সাধারণ লক্ষণ:
• রক্তপাত: এটি হলো মাসিকের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণ। রক্তপাত 2 থেকে 8 দিন স্থায়ী হতে পারে।
• পেটে ব্যথা: এটি মাসিকের আরেকটি সাধারণ লক্ষণ। পেটের ব্যথা হালকা থেকে তীব্র হতে পারে।
• মাথাব্যথা: মাসিকের সময় মাথাব্যথা হওয়াও অস্বাভাবিক নয়।
• বুকে ব্যথা: কিছু মহিলার মাসিকের সময় বুকে ব্যথা হতে পারে।
• মেজাজ পরিবর্তন: মাসিকের সময় মেজাজ পরিবর্তন হওয়াও সাধারণ।
• অবসাদ: কিছু মহিলা মাসিকের সময় হতাশ বোধ করতে পারেন।
• শরীরে ব্যথা: মাসিকের সময় পেশীতে ব্যথা ও অস্বস্তি হতে পারে।
পিরিয়ড সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য:
• সাধারণত মাসিক 21 থেকে 35 দিন পর পর হয়।
• রক্তপাতের পরিমাণ 5 থেকে 85 মিলিলিটার হতে পারে।
• মাসিক 5 থেকে 10 বছর বয়সে শুরু হয় এবং 45 থেকে 55 বছর বয়সে থেমে যায়।
• গর্ভবতী এবং স্তন্যদানকারী মহিলাদের মাসিক হয় না।
• কিছু ঔষধ ও চিকিৎসা পদ্ধতি মাসিকের চক্রকে প্রভাবিত করতে পারে।
অনিয়মিত পিরিয়ড হলো যখন একজন মহিলার ঋতুচক্র নিয়মিতভাবে হয় না। অনিয়মিত পিরিয়ডের অনেক কারণ আছে, যার মধ্যে রয়েছে:
হরমোনের ভারসাম্যহীনতা:
এস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন নামক হরমোন ঋতুচক্র নিয়ন্ত্রণ করে।
এই হরমোনের মাত্রায় তারতম্য হলে অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে।
অন্যান্য চিকিৎসাগত অবস্থা:
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (PCOS): এটি একটি সাধারণ অবস্থা যা ডিম্বাশয়ে অনেক ছোট ছোট সিস্ট তৈরি করে। PCOS এর ফলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে।
থাইরয়েড সমস্যা: থাইরয়েড গ্রন্থি হরমোন উৎপন্ন করে যা শরীরের বিপাক নিয়ন্ত্রণ করে। থাইরয়েডের সমস্যা হলে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং অনিয়মিত পিরিয়ড হতে পারে।
গর্ভাবস্থা: গর্ভবতী হলে মাসিক বন্ধ হয়ে যায়।
স্তন্যদান: স্তন্যদানকারী মহিলাদের মাসিক নিয়মিতভাবে নাও হতে পারে।
জরায়ুর অস্বাভাবিকতা: জরায়ুর ফাইব্রয়েড, পলিপ বা ক্যান্সারের মতো অস্বাভাবিকতা অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ হতে পারে।
জীবনধারাগত কারণ:
অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং অনিয়মিত পিরিয়ডের ঝুঁকি বাড়ায়।
অল্প ওজন: অল্প ওজনের মহিলাদের অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
অতিরিক্ত ব্যায়াম: অতিরিক্ত ব্যায়াম হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ হতে পারে।
মানসিক চাপ: মানসিক চাপ হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ হতে পারে।
অপর্যাপ্ত ঘুম: অপর্যাপ্ত ঘুম হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ হতে পারে।
ধূমপান: ধূমপান হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং অনিয়মিত পিরিয়ডের ঝুঁকি বাড়ায়।
মদ্যপান: অতিরিক্ত মদ্যপান হরমোনের ভারসাম্যহীনতা এবং অনিয়মিত পিরিয়ডের ঝুঁকি বাড়ায়।
ঔষধ:
কিছু ঔষধ, যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণের ঔষধ, অ্যান্টিডিপ্রেসেন্ট এবং অ্যান্টি-কনভালসেন্ট, অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ হতে পারে।
অনিয়মিত পিরিয়ড হলে, কারণ নির্ণয়ের জন্য এবং উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণের জন্য একজন ডাক্তারের সাথে দেখা করা গুরুত্বপূর্ণ। কিছু সাধারণ পরামর্শ যা আপনি অনুসরণ করতে পারেন:
জীবনধারার পরিবর্তন:
স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন: অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা হলে ওজন কমানো হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে এবং পিরিয়ডকে নিয়মিত করতে পারে।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন: নিয়মিত ব্যায়াম (সপ্তাহে 3-4 দিন, 30 মিনিট) হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে এবং পিরিয়ডকে নিয়মিত করতে পারে।
পর্যাপ্ত ঘুম নিন: প্রতি রাতে 7-8 ঘন্টা ঘুম হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করতে পারে এবং পিরিয়ডকে নিয়মিত করতে পারে।
মানসিক চাপ কমান: যোগব্যায়াম, ধ্যান বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের মতো কৌশলগুলি অনুশীলন করে মানসিক চাপ কমান।
ধূমপান ত্যাগ করুন: ধূমপান হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয় এবং পিরিয়ডকে আরও অনিয়মিত করে তুলতে পারে।
মদ্যপান সীমিত করুন: অতিরিক্ত মদ্যপান হরমোনের ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণে বাধা দেয় এবং পিরিয়ডকে আরও অনিয়মিত করে তুলতে পারে।
খাদ্য:
স্বাস্থ্যকর খাবার খান: প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং লাল মাংস (চর্বি ছাড়া) খান।
প্রক্রিয়াজাত খাবার, চিনিযুক্ত পানীয় এবং অস্বাস্থ্যকর চর্বি এড়িয়ে চলুন।
ঔষধ:
আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন যদি আপনি কোনও ঔষধ গ্রহণ করেন যা অনিয়মিত পিরিয়ডের কারণ হতে পারে।
আপনার ডাক্তার হরমোন থেরাপি বা অন্যান্য ঔষধের পরামর্শ দিতে পারেন যা পিরিয়ডকে নিয়মিত করতে সাহায্য করতে পারে।
অন্যান্য:
গর্ভনিরোধক ব্যবহার করুন: যদি আপনি গর্ভাবস্থা এড়াতে চান তবে জন্মনিয়ন্ত্রণের ঔষধ ব্যবহার করা পিরিয়ডকে নিয়মিত করতে সাহায্য করতে পারে।
একটি পিরিয়ড ট্র্যাকার ব্যবহার করুন: আপনার পিরিয়ডের ট্র্যাক রাখা আপনার ডাক্তারকে কারণ নির্ণয় করতে সাহায্য করতে পারে।
** মনে রাখবেন:**
অনিয়মিত পিরিয়ড সবসময় কোনও গুরুতর সমস্যার লক্ষণ নয়।
আপনার যদি অনিয়মিত পিরিয়ড হয় এবং এটি আপনাকে বিরক্ত করে তবে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলুন।
আপনার ডাক্তার আপনার নির্দিষ্ট পরিস্থিতির জন্য সেরা চিকিৎসার পরামর্শ দিতে সক্ষম হবেন।
7 months ago
8 months ago
8 months ago
8 months ago
9 months ago
10 months ago
10 months ago
10 months ago
11 months ago
1 year ago
1 year ago
1 year ago
1 year ago
1 year ago
1 year ago
1 year ago
1 year ago
1 year ago
1 year ago