কোলেস্টেরল কী, এর ক্ষতি কারক দিক ও প্রতিকার কী সম্পর্কে জানুন।

কোলেস্টেরল কী, এর ক্ষতি কারক দিক ও প্রতিকার কী সম্পর্কে জানুন।

স্বাস্থ্য সকলের মূল। সকলেরই সুস্থ থাকা প্রয়োজন। সুস্থ থাকার জন্য সকলকেই স্বাস্থ্যের মূল্য সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। সকলকেই স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। বর্তমান সময় এ আমরা দেখতে পাচ্ছি যে অধিকাংশ মানুষের কোলেস্টেরল এর সমস্যা হচ্ছে। আজকে আমরা আলোচনা করবো কোলেস্টেরল কী, এর ক্ষতি কারক দিক ও কোলেস্টেরল হলে কী কী করণীয়। আমাদের পরিবার, আত্মীয় ও পরিচিত অনেক এর কোলেস্টেরল এর সমস্যা আছে তাদের সাথে এই তথ্য শেয়ার করুন তাদের ও জানান কোলেস্টেরল হলে কী কী করণীয়।

কোলেস্টেরল কী

কোলেস্টেরল হলো এক ধরনের ফ্যাট যা শরীরের জন্য প্রয়োজনীয়। এটি কোষের মেমব্রেন, হরমোন, ভিটামিন ডি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। কোলেস্টেরল দুটি ধরণের হয়:

  • লো-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (LDL): এটিকে "খারাপ" কোলেস্টেরল বলা হয়। LDL কোলেস্টেরল ধমনীর দেয়ালে জমে পড়ে এবং ধমনীগুলোকে সরু করে দেয়। এটি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • হাই-ডেনসিটি লাইপোপ্রোটিন (HDL): এটিকে "ভাল" কোলেস্টেরল বলা হয়। HDL কোলেস্টেরল LDL কোলেস্টেরলকে ধমনী থেকে সরিয়ে দেয়। এটি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।

কোলেস্টেরলের মাত্রা

স্বাস্থ্যকর মানুষের রক্তে LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা 130 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের কম হওয়া উচিত। আর HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা 60 মিলিগ্রাম/ডেসিলিটারের বেশি হওয়া উচিত।

কোলেস্টেরল হলে কী কী ক্ষতি হতে পারে

কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর মধ্যে রয়েছে:

  • হৃদরোগ: LDL কোলেস্টেরল ধমনীর দেয়ালে জমে পড়ে এবং ধমনীগুলোকে সরু করে দেয়। এটি রক্ত প্রবাহকে বাধাগ্রস্ত করে এবং হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহ কমিয়ে দেয়। এটি হৃদরোগের একটি প্রধান কারণ।
  • স্ট্রোক: LDL কোলেস্টেরল মস্তিষ্কের ধমনীর দেয়ালে জমে পড়ে এবং ধমনীগুলোকে সরু করে দেয়। এটি মস্তিষ্কে রক্ত সরবরাহ কমিয়ে দেয় এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
  • পারিবারিক হাইপারকোলেস্টেরোলেমিয়া: এই রোগে শরীরে LDL কোলেস্টেরল তৈরির পরিমাণ বেড়ে যায়। এটি হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়ায়।
  • পেরিফেরাল আর্টারি ডিজিজ (PAD): এই রোগে পায়ের ধমনীগুলো সরু হয়ে যায়। এটি পায়ে ব্যথা, ক্ষত এবং এমনকি অঙ্গহানির কারণ হতে পারে।

কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের উপায়

কোলেস্টেরল কী ও এর ক্ষতিকারক দিক সম্পর্কে আমরা উপরে জানলাম, এখন আমরা আলোচনা করবো কীভাবে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা যার।

নিম্নলিখিত পদক্ষেপ গুলি অনুশরন করলে কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে থাকবে:

  • স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ: স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। স্বাস্থ্যকর খাবারের মধ্যে রয়েছে:
    • প্রচুর পরিমাণে ফল, শাকসবজি এবং গোটা শস্য
    • মাছ, বিশেষ করে সামুদ্রিক মাছ
    • বাদাম এবং বীজ
    • সয়াবিন এবং সয়াজাতীয় পণ্য
    • কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য
  • নিয়মিত ব্যায়াম: নিয়মিত ব্যায়াম LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে এবং HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণ: ওজন বেশি থাকলে LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
  • ধূমপান ত্যাগ: ধূমপান LDL কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায় এবং HDL কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। তাই ধূমপান ত্যাগ করলে কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
কোলেস্টেরল কমাতে হলে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলি নেওয়া যেতে পারে:
  • খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা: কোলেস্টেরল কমাতে হলে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্যাচুরেটেড ফ্যাট, ট্রান্স ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলযুক্ত খাবার কম খেতে হবে। এর পরিবর্তে প্রচুর পরিমাণে ফল, সবজি, গোটা শস্য এবং অসম্পৃক্ত ফ্যাটযুক্ত খাবার খাওয়া উচিত।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করা: নিয়মিত ব্যায়াম করলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। সপ্তাহে কমপক্ষে 150 মিনিট মাঝারি তীব্রতার ব্যায়াম বা 75 মিনিট উচ্চ তীব্রতার ব্যায়াম করা উচিত।
  • ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা: ওজন বেশি থাকলে তা কোলেস্টেরলের মাত্রা বাড়ায়। তাই ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।
  • ধূমপান ত্যাগ করা: ধূমপান করলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই কোলেস্টেরল কমাতে হলে ধূমপান ত্যাগ করতে হবে।
  • অ্যালকোহল পান কমানো: অতিরিক্ত অ্যালকোহল পান করলে রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই কোলেস্টেরল কমাতে হলে অ্যালকোহল পান কমাতে হবে।
  • নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা: কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়মিত পরীক্ষা করে দেখা উচিত। এতে করে কোলেস্টেরলের মাত্রা বেড়ে গেলে তা দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।

যদি কোলেস্টেরল কমাতে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন, ব্যায়াম এবং অন্যান্য পদক্ষেপগুলি কাজ না করে তাহলে ডাক্তারের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে।

উপসংহার

আজকে আমরা জানলাম কোলেস্টেরল কী, এর ক্ষতি কারক দিক ও প্রতিকার কী। কোলেস্টেরল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলেও এর মাত্রা বেড়ে গেলে বিভিন্ন ধরনের রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়। তাই কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা অত্যন্ত জরুরি।

More news and event